• ইমাম বুখারী (রহ.) এর জীবনী


    ইমাম বুখারী (রহ.)-এর জীবনী

    সহীহুল বুখারী

    জন্ম ঃ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ইমাম বুখারী (রহ.) 194 হিজরীর 13ই শাওয়াল জুমু’আর নামাযের পর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইব্রাহিম ইবনে মুগীরাহ ইবনে বারদিযবাহ আল বুখারী অাল জু’ফী।
    বাল্য জীবনঃ অতি অল্প বয়সেই তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গিয়েছিল। এতে তাঁর মাতা অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন এবং আল্লাহর নিকট দু’য়া করেন। হঠাৎ এক রাতে স্বেপ্ন দেখলেন ইব্রাহীম (আ.) এসে তাঁর মাকে বলছেন, তোমার শিশুপুত্রের চক্ষু সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। সত্যিই তিনি সকালে দেখলেন ইমাম বুখারী দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন।
    শিক্ষা জীবনঃ অতি অল্প বয়সেই ইমাম বুখারী (রহ.) পবিত্র কুরআন মাজীদ মুখস্থ করেন। দশ বছর বয়সে তাঁর মাঝে হাদীস মুখস্থ করার প্রবল স্পৃহা দেখা দেয়। ইমাম বুখারী (রহ.)-এর স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। এ সম্পর্কে
     অনেক  ঘটনা পাওয়া যায়। দারসে অপরাপর ছাত্ররা শিক্ষকের মুখ থেকে হাদীস শোনার পর লিখে নিতেন। কিন্তু ইমাম বুখারী (রহ.) লিখতেন না। অন্য ছাত্ররা বলতো অাপনি খাতা কলম ছাড়া বসে থাকেন কেন? এতে কি কোন ফায়দা আছে? প্রথমে তিনি কোন উত্তর দেন নি। অতঃপর যখন অন্য ছাত্ররা এ ব্যাপারে খুব বেশী বলতে লাগল, তখন ইমাম বুখারী বলে উঠেন যে ঠিক আছে আপনাদের সমস্থ লিখিত হাদীস নিয়ে আসুন। তাঁরা হাদীসসমূহ নিয়ে আসলেন। তিনি পর্যাক্রমে তাঁদের সেই হাদীসসমূহ মুখস্থ শুনিয়ে দিলেন। ইমাম বুখারী (রহ.)-এর স্মরণশক্তি সেদিন সকলকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিয়েছিল।
    হাদীস চর্চtাঃ ইমাম বুখারী (রহ.)হাদীস শিক্ষার জন্য তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের বিখ্যাত জ্ঞানকেন্দ্র কুফা, বসরাহ, বাগদাদ, মাদীনাহ ও অন্যান্য নগরী সফর করেন।তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। হাদীস শাস্ত্রে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হলো সহীহুল বুখারী। ইমাম বুখারী (রহ.) শুধু হাদীসেরই হাফিয ছিলেন না। বরং তিনি ফকীহ ও মুজতাহিদের সাথে সাথে (হাদীসের ত্রুটি বর্ণনার ক্ষেত্রে) এক মর্যeাদাকর স্থানে অধিষ্ঠিত ছিলেন। রিজালশাস্ত্রে তাঁকে ইমাম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম তিরমিযী বলেন,-“ইরাক ও খোরাসানে হাদীসের ত্রুটি বর্ণনা, ইতিহাস সম্পর্কেw জ্ঞান এবং হাদীসের সনদ সম্পর্কে পরিচিত ব্যক্তি মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল এর মত কাউকে দেখিনি।“ 

    অনুরুপভাবে আবূ মুসআব তাঁর সম্পর্কে বলেন, “ আমাদের নিকট মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল দীনের ব্যাপারে সূক্ষ্ন জ্ঞানের অধিকারী এবং উল্লেখযোগ্য ফকীহ ছিলেন ইমা্ম আহমাদ বিন হাম্বলের চেয়ে।“

    হাদিস সংকলনের নিয়মঃ ইমাম বুখারী (রহ.) হাদীস সংকলনের পূর্বে গোসল করতেন। দু-রাকআত সলাত আদায় করে ইস্তখারাহ করার পর এক একটি হাদীস লিপিবদ্ধ করতেন। 
    হাদীসের সংখ্যাঃ আলম-জামুল মুফাহরাসের হিসাব অনুযায়ী সহীহুল বুখারীতে সর্বমোট 7563টি হাদীস রয়েছে। আর তাকরার বা পুনরাবৃতি বাদ দিয়ে 4000 হাদীস আছে। এতে মোট 98টি কিতাব বা অধ্যায় রয়েছে। 6 লক্ষ হাদীস হতে যাচাই বাছাই করে দীর্ঘ 16 বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গ্রন্থখানি সংকলন করেন। সকল মুহাদ্দিসের সর্ব*সম্মত মতে সমস্থ হাদীস গ্রন্থের মধ্য হতে এর মর্যাদা সবার উর্দ্ধে এবং কুরআন মাজীদের পর সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ। বলা হয়ে থাকে-

    *কিতাবুল্লাহ তথা কুরআনের পর আসমানের নিচে সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ হচ্ছে সহীহুল বুখারী।*

    ইমাম বুখারী (রহ.) স্বীয় কিতাব সহীহুল বুখারী সংকলনের ব্যাপারে দুটি শর্ত আরোপ করেছেন।
         (1) বর্ণাকারী ন্যায়পরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য হওয়া।
         (২) উসতায ও ছাত্রের মাঝে সাক্ষাৎ প্রমাণিত হওয়া।

    সংকলনের কারণসমূহ ঃ সহীহুল বুখারী সংকলনের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কারণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
        (1) ইমাম বুখারী (রহ.)-এর উসতায ইসহাক বিন রাহওয়াই একদা তাঁর ছাত্রদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন যে, তোমাদেগর মধ্য থেকে যদি কেই শুধুমা্ত্র সহীহ হাদীসসমূহ একত্র করে একটি গ্রন্থ রচনা করতে তাহলে খুব ভালো হতো। এ থেকেই তাঁর মাঝে এ গ্রন্থ রচনার প্রেরণা জাগে।
        (2) কেউ কেউ বলেন, ইমাম বুখারী (রহ.) একবার স্বপেন্ দেখলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম-এর সহীহ হাদীসসমূহ যঈফ হাদীস থেকে আলাদা করা হবে। তারপর থেকে ইমাম বুখারী (রহ.) এ গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেন এবং দীর্ঘর 16 বছরে তাঁর মনোবাসনা পূর্ণ করেন।
        (3) সহীহুল বুখারী সংকলনের পূর্বে সহীহ ও যঈফ হাদীসগুলো আলাদা করে কোন গ্রস্থ রচিত হয়নি। হাদীসের গ্রন্থগুলোতে উভয় প্রকারের হাদীসই লিপিবদ্ধ ছিল। তাই মুসলিম সমাজে কেবলমাত্র সহীহ হাদীস সম্বলিতে একটি গ্রন্থের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তিনি এ গ্রন্থখানি রচনা করেন।

    ইমাম বুখারী (রহ.)-এর উস্তায সংখ্যাঃ ইমাম বুখারী (রহ.)-এর উস্তাযের সংখ্যা ছিল সহস্রাধিক। তাঁর প্রসিদ্ধ কয়েকজন ওস্তাদের নাম উল্লেখ করা হলো ঃ
          (1) মাক্কী ইবনু ইবরাহীম (2) ইবরাহীম ইবনু মুনযির (3) মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ (4) আল হুমাইদী (5) ইদাম বিন আবী আয়াস (6) আহমাদ বিন হাম্বল (7) অালী ইবনুল মাদিনী (রহ.)।


    ইমাম বুখারী (রহ.) -এর ছাত্র সংখ্যা ঃ ইমাম বুখারী (রহ.)-এর ছাত্র সংখ্যা অসংখ্য। কোন কোন বর্ণনা মতে তাঁর ছাত্রের সংখ্যা 90 হাজার। তাঁর মধ্যে প্রসিদ্ধ কতিপয়ের নাম উল্লেখ করা হলো ঃ
       (1) আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (২) আবু ঈসা তিরমিযী (৩) আবদুর রহমান আন-নাসাঈ (4) আবু হাতিম। 

    ইমাম বুখারী (রহ.)-এর গ্রন্থসমূহ ঃ (১) জামেউস সগীর (২) জুযউর রফইল ইয়াদাইন (৩) যুযউল কিরাআত (৪) আদাবুল মুফরাদ (৫) তারীখুল কাবীর (৬) তারীখুস সগীর (7) তারীখুল আওসাত (৮) বিররুল ওয়ালিদাঈন (৯) কিতাবুল ঈলাল (10) কিতাবুয যুআফা।


    তিরোধানঃ হাদীসের জগতে অন্যতম দিকপাল জীবনের শেষ প্রান্তে সীমাহীন জ্বালা যন্ত্রণা, দুঃখ-বেদনার মধ্য দিয়ে খারতাঙ্গ নামক পল্লীতে 256 হিজরীর 1লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর দুনিয়া হতে চির বিদায় গ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 62 বছর।

    (সংগ্রহ-সহীহুল বুখারী-1ম খন্ড তা.প্র.)




     *হে আল্লাহ! তুমি তাঁকে এর বিনিময়ে যথোপযুক্ত প্রতিদান দান কর। আমীন!*



  • 0 comments:

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    GET A FREE QUOTE NOW

    Lorem ipsum dolor sit amet, consectetuer adipiscing elit, sed diam nonummy nibh euismod tincidunt ut laoreet dolore magna aliquam erat volutpat.

    ADDRESS

    DOHS Mirpur, Pollobi, Dhaka-1216

    EMAIL

    contact-saddam862017@gmail.com

    TELEPHONE

    +880 1796711986

    MOBILE

    +880 1918067586